বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্মল প্রশান্তি যেথায় পেয়েছি 

  • ওয়াহিদুজ্জামান মৃধা   
  • ১০ জুলাই, ২০২১ ১১:২৫

নির্ধারিত সময়ে সমুদ্রের তীরে এসে বাস থামতেই নেমে পড়ি। লাফালাফি, সাঁতার কাটা, ফুটবল নিয়ে মাতামাতি, সেলফি, ফটোসেশন, লম্ফঝম্ফ চলতে থাকে।

প্রকৃতিকে নানাভাবে আমরাই ধ্বংস করছি। তাই সে ক্ষুব্ধ। ফলে একের পর এক আসছে দুর্যোগ। এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে চলছে মহামারি 'করোনা'।

প্রায় দেড় বছর ঘরবন্দি জীবন। প্রিয় মাতৃভূমি, নিকটাত্মীয়দের থেকে বহু দূরে। পরবাস নামক কারাগার।

এর মধ্যে একদিন সুযোগ এলো 'আইল অফ উইট' যাবার। এটি ইংল্যান্ডের বৃহত্তম এবং দ্বিতীয় জনবহুল দ্বীপ। ইংলিশ চ্যানেল ও হ্যাম্পশায়ারের উপকূলে দুই থেকে পাঁচ মাইলের মধ্যে এর অবস্থান। সেখান থেকে এটি সোলেন্ট দ্বারা পৃথক করা হয়েছে। এখানে এমন রিসোর্ট রয়েছে যা ভিক্টোরিয়ার সময় থেকে চলে আসছে।

লন্ডন থেকে 'আইল অফ উইট' প্রায় ৮০ মাইলের পথ। শহর-বন্দর পেরিয়ে কখনও পাহাড়, কখনও পর্বত। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে বিশাল রাস্তা, অরণ্য, সমতল ও সাউথাম্পটনের 'রেড ফানেল’ দীর্ঘ ফেরি পার হয়ে সেখানে যেতে হয়।

এখানে হালকা আবহাওয়া, জলবায়ু, উপকূলীয় এলাকা, মাঠ, নিম্নভূমি এবং চেইনগুলোর মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পরিচিত।

দ্বীপটি হ্যাম্পশায়ারের ঐতিহাসিক কাউন্টির অংশ এবং ইউনেস্কোর বায়োস্পিয়ার রিজার্ভ হিসেবে মনোনীত।

মূলত ‘আইল অফ উইট’ একটি লেগুন। যা মূল ভূখণ্ডের অংশকে পৃথক করে ওয়ার্সেস্টার কাউন্টি, মেরিল্যান্ডের মিডটাউন অংশ থেকে ওশান সিটি, ওয়ার্সেস্টার কাউন্টিতে সংযুক্ত করেছে।

এখানে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শ্যাঙ্কলিন চেইন, ক্লিফ লিফট, ব্রেডিং ডাউন লোকাল নেচার রিজার্ভ, ব্ল্যাকগ্যান চাইন, স্যান্ডাউন সমুদ্রসৈকতসহ নানা দর্শনীয় স্থান। আছে স্বচ্ছ নীল পানির ঢেউ, সমুদ্রের বালুকণার মাঝে সূর্যের উত্তাপ।

আছে সাজানোগোছানো পাহাড়, সমুদ্রসৈকত, ঘরবাড়ি, ফোয়ারা, নদী, গাছপালা ও প্রকৃতির অপরূপ সাজ। এমনকি সমুদ্রের তীরে বাচ্চাদের জন্য বিনোদনের নানা উপকরণও আছে।

পাশেই স্বচ্ছ নীল জলরাশির বিশাল সমুদ্র। স্বাভাবিক প্রকৃতির কোনো রকম ক্ষতি না করে সবকিছুই নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে ব্রিটিশরা।

অবশ্য ইউরোপের যেখানেই গিয়েছি সেখানেই এমন রূপ দেখেছি। পাহাড়, পর্বত, প্রকৃতি যেখানে যে অবস্থায় আছে; সে অবস্থানে রেখেই তারা বসবাসযোগ্য করে তুলেছে।

আগেও অন্যান্য দুর্গম এলাকায় গিয়ে খেয়াল করেছি, এখানে এসেও দেখলাম; যুক্তরাজ্যের যেখানেই থাকেন না কেন; সেখানকার এবং শহরের (রাজধানী) নাগরিক সুবিধা একই রকম। যাবতীয় উপাদান, সুযোগসুবিধা সব। অবশ্য এখানে নির্মল প্রকৃতির বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।

এসব দেখলে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় নেই। কীভাবে তারা এমনটি করতে পেরেছে? ইউরোপে যা দেখি তাতেই অবাক হই। আসলে দেশপ্রেম, সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা আর পরিকল্পিত পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই ।

যাক, মূল প্রসঙ্গে আসি।

গত সোমবার 'ইউনিভার্সেল ভয়েস ফর হিউম্যান রাইটস' (ইউভিএইচআর) ইউকে গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ ও বনভোজনের জন্য এ জায়গা নির্ধারণ করে।

সকাল সাড়ে ৭টায় পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্ক থেকে দুইটি মাইক্রোবাসে যাত্রা শুরু হয়।

নির্ধারিত সময়ে সমুদ্রের তীরে এসে বাস থামতেই নেমে পড়ি। লাফালাফি, সাঁতার কাটা, ফুটবল নিয়ে মাতামাতি, সেলফি, ফটোসেশন, লম্ফঝম্ফ চলতে থাকে।

আইল অফ উইটে লেখক এবং অন্যরা।

এর মাঝে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে সমুদ্রের জোয়ারভাটা দেখা হয়ে যায়। ফলে আমরা সমুদ্রের তীরে যেই পানিতে লাফালাফি, দাপাদাপি করেছি, কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানেই সুষ্টি হয় ধু-ধু বালুচর! স্রষ্টার এ কী লীলাখেলা! সত্যি অবাক করে। চিন্তায় ফেলে। এ আকর্ষণ রেখে কি ফিরতে ইচ্ছে করে?

মন চায়, জোয়ারভাটার এ খেলা দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নামুক। জোনাকি জ্বলুক। চাঁদের আলো পড়ুক নীল জলরাশির ঢেউয়ে। সব কোলাহলে তৃপ্তির প্রশান্তি ঘিরে কেটে যাক না সময়। কিন্তু যান্ত্রিক এ জীবনে তা কি সম্ভব?

ফিরতে হবেই। তবে আবার আসব, কথা দিয়ে দ্বীপটাকে বিদায় জানিয়ে চলে আসি।

এ বিভাগের আরো খবর